লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় দাদন ব্যবসায়ী আমিনুর রহমানের চড়া সুদে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। সময় মতো সুদের টাকা দিতে না পারলে নিজের ইচ্ছে মতো টাকা দাবি করে মামলা দ্বায়ের করেন। নিঃস্ব হয়েছেন সুদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে। সেই সুদের টাকা দিতে না পেরে অনেকেই হয়েছেন ঘরছাড়া।
কেউ বিক্রি করেছেন শেষ সম্বল ভিটেমাটিটুকুও। এতে কয়েকজন তার দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করেও স্বাক্ষরকৃত ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ব্যাংক চেক ফিরে না পাওয়ায় তারা তার বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় পৃথক পৃথক ভাবে লিখিত অভিযোগ ও গণপিটিশন দিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসী।
জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলার সর্বত্র এখন ছড়িয়ে পড়েছে দাদন ব্যবসায়ী আমিনুর রহমানের চড়া সুদের ব্যবসা। সুদ গ্রহিতাদের কাছ থেকে নেন ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ফাঁকা ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর। তারপর দেন চড়া সুদে টাকা। গ্রহিতার চড়া সুদের টাকা দিতে দেরি হলে তিনি তার ইচ্ছে মতো ব্যাংক চেকে টাকার পরিমাণ বসিয়ে চেক জালিয়াতির মামলা দেন। শেষে অনেকেই তার দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করেও ফিরে পাচ্ছে না স্বাক্ষরকৃত ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ফাঁকা ব্যাংক চেক।
সে রকম একজন ভুক্তভোগী হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের অনিল চন্দ্র তিনি বলেন, ২০ শতাংশ সুদে পূর্ব সিন্দুর্ণা গ্রামের মৃত আঃ গফুরের ছেলে দাদন ব্যবসায়ী আমিনুরের কাছ থেকে সুদে দুই লক্ষ টাকা নিয়েছিলাম। নির্ধারিত সময়ে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় প্রায়ই আমাকে অপদস্থ করতেন। পরে বাধ্য হয়ে বসতভিটার আট শতক জমি ওই দাদন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। তবে টাকা পরিশোধ করার পরেও এখনো আমার চেক ও স্ট্যাম্প ফেরত দেননি তিনি। তাই বাধ্য হয়ে আমিনুরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছি।
অপর এক অভিযোগকারী একই উপজেলার পূর্ব সিন্দুর্না এলাকার মোহন চন্দ্র রায় বলেন, ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে দাদন ব্যবসায়ী আমিনুর রহমানের কাছে সুদে ১ লক্ষ টাকা নিয়েছিলাম। ওই দাদন ব্যবসায়ীর দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করেও ফিরে পাচ্ছি না আমার স্বাক্ষরকৃত ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ব্যাংক চেক। সে আওয়ামীলীগের নেতা ও সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরল আমিন এর ভাই হওয়ার কারনে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চেক ষ্টাম্প ফিরত দেয়নি। এই আমিনুরের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছে সে সর্বস্বান্ত হয়েছে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি
দইখাওয়া মোড় এলাকার জুতা ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ বলেন, আমিনুরের সুদের টাকা পরিশোধ করার পরেও আমার চেক ও স্ট্যাম্প ফেরত দিচ্ছেন না। উল্টো চেক ও স্ট্যাম্প চাইতে গেলে আমাকে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। সে আবার নিজে কোন মামলার বাদী হয়না তার পালিত কিছু লোককে দিয়েই আদালতে চেকের মামলা করেন।
আমি এই দাদন ব্যবসায়ী আমিনুরের বিচার চাই।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজিব বলেন, আমিনুল এলাকায় সুদখোর হিসেবে পরিচিত। তিনি একজন পেশাদার সুদখোর। তার যে নির্দিষ্ট কোনো ইনকামের পথ নেই। সে এই সুদেরই ব্যবসা করে চলে। আমাদের প্রতিবেশী যারা তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তাদের সে বাড়িছাড়া করেছে। এ রকম মানুষের একটা বিচার হওয়া উচিত যাতে করে আমাদের এই এলাকা শান্ত থাকে আমরা এর একটা দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে আমিনুর রহমান বলেন, কোনো সুদের ব্যবসা করি না। কেউ বলতে পারবে না। আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। যারা আমার নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছে আমি তাদের চিনি না।
হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুন নবী বলেন, আমিনুরের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। দ্রুত তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।