জবি প্রতিনিধি:
আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টে জয়লাভের পর সাউন্ড বক্সে গান বাজিয়ে উদযাপন করেছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান সম্পর্কিত একটি গান বাজিয়ে হাসতে হাসতে উল্লাস করেন তারা। এ ঘটনার জেরে ওই বিভাগের চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া কমিটি। তবে ওই উল্লাসকে ব্যাঙ্গাত্বক বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। এঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, ১৮ নভেম্বর (সোমবার) পুরান ঢাকার ধূপখোলায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে খেলা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ম্যাচে জয়লাভের পর সাউন্ড বক্সে গান বাজিয়ে উল্লাস করে। এসময় তারা সাউন্ড বক্সে ব্যঙ্গ করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান সম্পর্কিত গান বাজিয়ে সাথে নিজের’ ব্যাঙ্গাত্বকভাবে সেই স্লোগান দিয়ে উল্লাস করে। এতে স্থানীয় জনগণ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রধানের কাছে কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া কমিটি। ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রইছ উদদীনের সই করা ওই নোটিশে বিভাগের প্রধানকে ২০ নভেম্বর সকাল ১০ টার মধ্যে কারণ দর্শানোর কথা বলা হয়েছে।
এঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিশের খবরে অবাক হয়েছেন জয় উল্লাসে অংশ নেয়া সেই শিক্ষার্থীরাও। ম্যাচ জয়ের পর ব্যাঙ্গ করে জয় উল্লাস উদযাপনে স্লোগান দিলেও, সেটাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী আলী আহমেদ আরাফ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “৭ম আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টে গতকাল ধূপখোলায় জবি কেন্দ্রীয় মাঠে ব্যবস্থাপনা বিভাগকে হারিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগ জয় লাভ করে। ম্যাচ জয়ের পর আমরা সবাই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ি। বিভিন্ন গানের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা নেচে-গেয়ে জয় উদযাপন করেছে। তখন স্বৈরাচার খুনি হাসিনাকে ব্যঙ্গ করে ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা’ গানেও নেচেছি আমরা। বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার। আমরা সেখানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান মিছিল করিনি। মূলত গানের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ব্যঙ্গ করে নেচেছে।”
আরাফ আরও বলেন, “আমরাই স্বৈরাচার হাসিনাকে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ‘জয় বাংলা’ করে দিয়েছি, মানে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি। ব্যঙ্গ করে নাচা-গাওয়া এবং মিছিলে স্লোগান দেওয়া—এই দুইটি আলাদা বিষয়। রাজপথে স্লোগান দিতে দিতে অন্তত এটুকু বুঝি, কোনটা স্লোগান মিছিল আর কোনটা নয়। তাই দুটোকে একসঙ্গে মিলিয়ে ফেলবেন না।”
এ বিষয়ে গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি ঘটনা প্রত্যক্ষ করিনি, স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে শুনেছি। আমি পাশেই ছিলাম। কয়েকজন ঘটনাটি জানালে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্লোগান দিতে দেখিনি বা শুনিনি। স্থানীয় লোকজন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিয়ে অভিযোগ করলে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানাই।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আছমা বিনতে ইকবাল বলেন, “ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঘটেনি, ঘটেছে বাইরে খেলার মাঠে। এই ঘটনার সঙ্গে বিভাগের কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নেই। এটা একান্তই শিক্ষার্থীদের বিষয়। এমন একটি বিষয়ে বিভাগের কেন নোটিশ পাঠানো হলো, তা আমার জানা নেই।”
এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রইছ উদদীনকে ফোন দেয়া হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।