মোঃমোমিনুল ইসলাম স্টাফ রিপোর্টার(দিনাজপুর)
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা দিনাজপুর মুক্ত করে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানীদের পুতে রাখা মাইন, লুকিয়ে রাখা ও ফেলে যাওয়া অস্ত্রশস্ত্র, বোমা এবং গোলাবারুদ উদ্ধারের জন্য মহারাজা গিরিজানাথ উচ্চ বিদ্যালয় ট্রানজিট ক্যাম্পে ২০ ডিসেম্বর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।
১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি বিকেলে ঘোড়াঘাট ও নবাবগঞ্জ এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা দুই ট্রাক অস্ত্রশস্ত্র, মাইন, বোমা ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে মহারাজা স্কুল ক্যাম্পে নিয়ে আসে। বিকেল আনুমানিক সোয়া ৫টার দিকে দ্বিতীয় ট্রাক থেকে অস্ত্র খালাসের সময় অস্ত্র-গোলাবারুদ হাত বদলের একপর্যায়ে একজন মুক্তিযোদ্ধার হাত থেকে একটি মাইন মাটিতে পড়ে যায়, ফলে ব্যাংকারে স্তুপীকৃত বিপুল পরিমাণ মাইন, বোমা, বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে বিদ্যালয়ের কক্ষে এবং মসজিদে নামাজ আদায়কারী মুক্তিযোদ্ধারা নিহত হয়। ব্যাংকার সংলগ্ন এলাকা ২০ থেকে ২৫ ফুট গভীর পুকুরে পরিণত হয়।
পরের দিন দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড়ময়দানে বিপুল সংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে ৯৬ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে পূর্ণসামরিক মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ পুণ্যভূমি দিনাজপুর চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়। পরে ঐ স্থানে আরো ৩৯ জনসহ মোট ১৩৫ জনকে সমাহিত করা হয়। এছাড়াও অনেকের লাশ তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা নিয়ে যায় এবং অনেকের দেহ একেবারেই ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে পড়ায় মৃতর সংখ্যা হিসাব করা দুরূহ হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার পরের দিন মহারাজা বিদ্যালয় এলাকা থেকে শরীরের হাত-পাসহ প্রায় ৫০ মণের মত মাংসপিণ্ড উদ্ধার করা হয়।