
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাবিউল ইসলামকে ঘুসের ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকাসহ আটক করা হয়েছে। বৃহসপতিবার রাত ২টার দিকে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের চলনবিল গেট এলাকায় চেকপোস্টে টাকা ও গাড়িসহ প্রকৌশলীকে আটক করে পুলিশ। এসময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা এলজিইডির সিনিয়র প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন এ প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।

পুলিশ জানায়, গভীর রাতে মহাসড়কের চলনবিল গেট এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালায় পুলিশ সদস্যরা। এসময় গাইবান্ধা থেকে রাজশাহীগামী একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকারকে থামার সিগন্যাল দেওয়া হয়। গাড়িটি থামলে তল্লাশি করলে গাড়িতে ব্যাগ ভর্তি টাকা পাওয়া যায়।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসমাউল হক বলেন, চেকপোস্টে একটি প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে কালো ব্যাগ ভর্তি টাকা দেখতে পায় পুলিশ। এসময় গাড়ির আরোহীর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে গাইবান্ধার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বলে পরিচয় দেন। এতে সন্দেহ হলে প্রাইভেটকার, টাকাসহ আরোহী সাবিউল ও চালককে আটকে রেখে বিষয়টি পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. একরামুল হক, সিংড়ার ইউএনও মাজাহারম্নল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (সিংড়া) সার্কেল সনজয় কুমার সরকার, এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ টিম ঘটনাস্থলে যায়। তারা গিয়ে গাড়িতে থাকা ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা উদ্ধার করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাইবান্ধা এলজিইডির এক কর্মচারী বলেন, ‘স্যার বৃহসপতিবার হলেই সাদা গাড়ি নিয়ে তার বাড়ি যান। পাঁচদিন অফিস করে ঠিকাদারের কাছ থেকে কমিশন নেন। সেগুলো গাড়িতে করে বাড়ি নিয়ে যান। আমরা ছোট চাকরি করি চোখের সামনে কোটি টাকার খেলা হয়। কিছুই বলার নাই। অফিসের বাইরেও রিয়াজ নামে এক ছেলেকে তার নিজ অর্থায়নে সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ছাবিউল ইসলামের সহকারী রিয়াজকে প্রশ্ন করলে তিনি অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, স্যার কি এই বৃহসপতিবারও বাড়িতে টাকা নিয়ে গেছেন?
এসময় তিনি বলেন, ‘বৃহসপতিবার এলেই স্যার কিছু না কিছু টাকা নিয়ে যান। আর এ টাকাগুলো তো স্যার একাই খান না। রাজশাহীতে নেতা ও ঢাকা অফিসে কিছু পাঠাতে হয় স্যারকে। আমি এইটুকু জানি।
উল্লেখ্য, ছাবিউল ইসলাম প্রায় ২১ বছর ধরে গাইবান্ধায় কর্মরত রয়েছেন। প্রয়াত ডেপুটি সিপকার ফজলে রাব্বী মিয়ার পালক ছেলে হিসেবেই তিনি আওয়ামী লীগের সবার কাছে পরিচিত। ফলে অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও এতদিন তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায়নি কেউ।