মনিরুজ্জামান খান গাইবান্ধাঃ-
সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক বাস্তবায়ন করেন ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে দেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের যাত্রা শুরু হয়।
অথচ,মা-শিশু ছাড়াও সাধারণ রোগের পাশাপাশি ক্যান্সারের স্কিনিং করার কথা এসব ক্লিনিক থেকে। রয়েছে রোগী রেফার করার পদ্ধতি। কমিউনিটি ক্লিনিক সরকারের সর্বনিম্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো।
এ ক্লিনিকগুলো থেকে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ঔষধ সরবরাহ করা হয়। অথচ ৮ থেকে ৯ প্রকারের ঔষধ ছাড়া জানেন না প্রান্তিক রোগীরা।
গাইবান্ধা জেলার সাত উপজেলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে দ্রুত সময়ের মধ্যে জরুরি চিকিৎসা সেবা দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করে ৩০৫টি। যাতে মানুষ সহজেই প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা পায়।
অথচ এ-ই ক্লিনিকেই যেন মানুষের দুর্ভোগ’ সকাল থেকে দুপুর গড়ে অথচ দেখা মেলে না হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)এর কর্মকর্তাদের,
এসব ক্লিনিকের অধিকাংশই খোলা হয় মনগড়া মতো,কমিউনিটি ক্লিনিক,নেই তদারকি সেবাবঞ্চিত রোগীরা। প্রায় দু সপ্তাহের অনুসন্ধানের পর এমন তথ্য উঠে এসেছে।
এতে সরকারের স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁচ্ছানো হলেও। চিকিৎসা পাচ্ছেন না প্রান্তিক দরিদ্র মানুষ গুলো। এতে সরকারের ইমেজ নষ্ট করছেন কমিউনিটি ক্লিনিক ।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়,গাইবান্ধার সাত উপজেলার তৃণমূলের মানুষের মাঝে চিকিৎসাসেবা দিতে রয়েছে ৩০৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক। এরমধ্যে সদর উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে ৫২টি, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে ৬১টি, পলাশবাড়ী উপজেলায় ৩৩টি, সাদুল্লাপুর উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ৩৯টি,ফুলছড়ির সাত ইউনিয়নে ১৮টি,সাঘাটা উপজেলায় ৩৯টি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ৬৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।
জানা যায়,স্বাস্থ্যসেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ তৃণমূলে পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকারে উদ্যোগে কমিউনিটি ক্লিনিক করা হয়। চাহিদা অনুযায়ী বছরে ৩ থেকে ৪ বার ওষুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সরকার প্রতিটি ক্লিনিকে টাকা খরচ করলেও পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে না জেলাবাসী। জেলা বা উপজেলা থেকে তদারকি না থাকায় সিএইচসিপি,এইচএ,এফডব্লিউএ দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের শেষ নেই এই ক্লিনিক কে নিয়ে।
কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা নেই ক্লিনিকগুলোর। সেবা নিতে আসা রোগীদের ফিরে যেতে হয় খালি হাতে। ক্লিনিকে কতৃপক্ষ না আসায় যেতে হয় ফিরে। কোন কোন ক্লিনিকে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন আসেন,আবার নদীবেষ্টিত এলাকায় চর গুলোতে দেখা মেলে না সপ্তাহেও কতৃপক্ষের অফিসে আসা।
সচেতন মহল মনে করেন মনিটরিং এর অভাব হওয়ায় এর এহেন অবস্থা,তাই এখনই শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে উর্ধতন কতৃপক্ষের সুনজর দিতে হবে।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে কার্যক্রম অনেকটাই উদাসীনতা,এছাড়াও কোন কোন ক্লিনিকে হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মাসে ৩/৪ বার আসারও অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় ঠিকমত ক্লিনিকে আসেন না।
শুক্রবার শনিবার ছাড়া সপ্তাহে ৫ দিন কমিউনিটি ক্লিনিক খোলা থাকার কথা। যেখানে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ছাড়াও পর্যায়ক্রমে তিন দিন করে, স্বাস্থ্য সহকারী এবং পরিবার পরিকল্পনা সহকারীর চিকিৎসা দেওয়ার কথা। সে হিসেবে প্রতিদিন ক্লিনিকে দুজনের সেবা প্রদান করার কথা। শতকরা ৮০℅ রোগীদের অভিযোগ, সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই বন্ধ থাকে ক্লিনিক। ফলে সাধারণ মানুষজন এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়,পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কাজির বাজার,কুমিদপুর বাজার , হরিনাথপুর ইউনিয়নের ফাড়িথানা সংলগ্ন ,পবনাপুর ইউনিয়নের বেতকাপা রোড সংল্গ্নসহ বেশের ভাগেই খোলেন সকাল সারে ১১টাও ১২ টায়, আবার সপ্তাহে কোন কোন দিন অফিসে আসেন না হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মকর্তারা। মনোহরপুরের বাসিন্দা আবেদা বেগম(৬০),ও জহুরুল ইসলাম( ৪০), এবং রোজিনা খাতুন, কুমেদপুর গ্রামের সাবানা খাতুন(২৫) মতো শত মানুষের অভিযোগের শেষ নেই এই কমিউনিটি ক্লিনিককে নিয়ে। এবিষয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্ব থাকা ফিরোজ কবির
বলেন যদি এইরকম হয় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে ও শোকজ পর্যন্ত করা হবে । এদিকে সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের বোর্ড বাজার, রাধাকৃষ্ণপুর কমিউনিটি ক্লিনিকসহ জেলার গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ ক্লিনিক দুপুর সাড়ে ১২টায় বন্ধ পাওয়া যায়। এখানে অনেকেই জানেন না ২৬ প্রকার ঔষধ পাওয়া যায় চিকিৎসার জন্য।
রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা জামিলা বেগম বলেন, ক্লিনিকে একজন মহিলা কাজ করেন। তিনি নিয়মিত আসেন না। অনেক দূর থেকে রোগীরা এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান। আসলেও দেরিতে আসেন আর দুপুরেই আগেই ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যান।
এদিকে, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন চরাঞ্চল হওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর দশা আরও বেহাল। দুই উপজেলার হেড কেয়াটার্স ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোই দুপুর দুইটার দিকে বন্ধ পাওয়া যায়।
ফুলছড়ি উপজেলার এড়েন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা আলমাস হোসাইন বলেন, চরের মানুষরা অশিক্ষিত। অনেকেই আবার কাজে ব্যস্ত থাকে, তাই এসব ক্লিনিকে সেবা নেওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ বসে থাকে না। এছাড়াও এসব ক্লিনিক যারা চাকরি করেন, তারা অনেকেই প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের সাথে জড়িত। এখানে কী ওষুধ আসলো, কী বিতরণ হলো- এগুলো দেখার কারও সাহস নেই।
এবিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, শুনেছি নিয়মিত গ্রামের ক্লিনিকগুলো খোলা হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ ওষুধ নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা স্যারকে অবগত করেছি।
গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা.কানিজ সাবিহা বলেন বিষয়টি আমার জানা ছিল না। উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে কথা বলবো। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সকাল ৯টা থেকে না খুললেও যেন সকাল সারে নয়টায় খুলে
এরকম নির্দেশনাও দিলেন মোবাইল ফোনে উপজেলা দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাগনকে , সেই সাথে সুষ্ঠ সেবা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, তৃণমূলের রোগীদের মাঝে ওষুধ বিতরণে কোনও অনিয়ম হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। কোন ধরনের অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।