
মো:মেহেদী হাসান ফুয়াদ
দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের পদত্যাগ করানোর হিড়িক চলছে। তার ঢেউ লেগেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানদের পদত্যাগ করানো হচ্ছে। আর এর সঙ্গে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়িত রয়েছে। কিন্তু দিনাজপুরের এক বিদ্যালয়ে ঘটেছে এর ব্যতিক্রম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে স্বপদে ফেরাতে আন্দোলন শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। এমনকি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে কাউকে বসতে দিতে নারাজ শিক্ষার্থীরা।বুধবার (২৮ আগস্ট) এমনই দৃশ্যের দেখা মিললো দিনাজপুর শহরের সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। গতকাল থেকে তারা বিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। তাদের দাবি, প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে আসতে বাধা দিয়েছেন কিছু সুযোগসন্ধানী শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়াও বন্ধ করেছেন। প্রধান শিক্ষকের ব্যাপারে এবং ক্লাস বন্ধের ব্যাপারে জানতে চাইলে একেক সময় একেক কথা বলছেন সহকারী প্রধানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা।শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, বর্তমান প্রধান শিক্ষক রতন কুমার রায় যোগদানের পর বিদ্যালয়ে হয়েছে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, বেড়েছে শিক্ষার মান। তাই শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রধান শিক্ষককে স্বপদে ফিরিয়ে দেওয়া।
নবম শ্রেণির ছাত্রী রামিসা সারওয়ার বলেন, রোববার থেকে আমরা স্কুলে আসছি, কিন্তু কোনো ধরনের ক্লাস হয়নি। আজকেও স্কুলে আসছি, কিন্তু কোনো ধরনের ক্লাস হয়নি। এখন পর্যন্ত আমাদের ক্লাসে হাজিরা পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। পরে জানতে পেরেছি, শিক্ষকরা আন্দোলন করছে। প্রধান শিক্ষকের ব্যাপারে বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন কথা বলছে।অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা বলেন, কয়েকদিন আগে আমাদের প্রধান শিক্ষক রতন স্যারকে কয়েকজন শিক্ষক অপমান করে। স্যার তো বিদ্যালয়ের উন্নয়ন করেছে আমাদের জন্য। এই কারণে কিছু শিক্ষক স্যারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে বেড়াচ্ছে। আমরা চাই স্যার যেন তার চেয়ারে পুনরায় ফেরত আসেন। নইলে সেই চেয়ারে আর কোনো স্যারকে বসতে দেব না। প্রয়োজনে আমাদের আন্দোলন চলমান রাখব। স্যার না আসা পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেন, বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন নানাভাবে হুমকি প্রদান করছে। এমনকি আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে যেতে চাইলে আমাদের আটকে রাখা হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত) আঞ্জুমান আরা বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ রয়েছে। তাই সকল শিক্ষক চাচ্ছে এ ব্যাপারে অডিট হোক। এই কারণে শিক্ষকরা ক্লাসে যাচ্ছে না বা হাজিরা নিচ্ছে না।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদেরকে জিম্মি করে ক্লাস বর্জন করা ঠিক হয়নি। এটা আমাদের ভুল হয়েছে। প্রধান শিক্ষক অসুস্থ থাকায় বিদ্যালয়ে আসেননি। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না।
প্রধান শিক্ষক রতন কুমার রায় বলেন, মিথ্যা অভিযোগে নিয়মবহির্ভূভাবে তাকে বিদ্যালয় থেকে সরানোর চেষ্টা করছে একটি মহল।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানে আলম বলেন, আজকেই বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব পালনের জন্য চিঠি হাতে পেয়েছি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরর আন্দোলনের বিষয়ে আমি এখনো কিছু জানি না।