মোঃমোমিনুল ইসলাম স্টাফ রিপোর্টার (দিনাজপুর)
দিনাজপুরে আগামী বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর-২০২৪) বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী তাবলীগ জামাতের জেলা ইজতেমা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শনিবার জোহরের নামাজের পূর্বে আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে জেলা এজতেমা শেষ হবে।
দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ ময়দানে (বড়মাঠ) পুলিশ কার্যালয়ের সামনে এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য প্যান্ডেল তৈরীর কাজ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪) দুপুরের মধ্যে শেষ হয়েছে। তাবলীগ জামাতের সাথীরা স্বেচ্ছাশ্রমে ইজতেমার প্যান্ডেল তৈরীসহ অন্যান্য সব কাজ করেছেন।
দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলা হতে আগত তাবলীগ জামাতের সাথীদের নিয়ে এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধাসহ অন্যান্য জেলা-উপজেলা হতে তাবলিগ জামাতের সাথীরাও এই ইজতেমায় যোগ দিবেন।
প্রতিটি উপজেলার জন্য আলাদা কিপতা তৈরি করা হয়েছে। তাবলিগ জামাতের সাথিরা এসব নির্দিষ্ট কিপতায় অবস্থান করবেন।
শুক্রবার ইজতেমা প্যান্ডেলেই জুমার নামাজ আদায় করা হবে। এটি জেলার সর্ববৃহৎ জুমার নামাজের জামাত হবে বলে জানিয়েছেন তাবলীগ জামাতের কয়েকজন মুরব্বি। ইজতেমায় মালয়েশিয়া হতে আগত একটি জামাত অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।
দিনাজপুর তাবলীগ জামাতের আমীরে ফায়সাল ও তিন দিনব্যাপী ইজতেমার জিম্মাদার (দায়িত্বশীল) হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) কৃষি রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল হাকিম জানান,
ইজমেতায় বাংলাদেশের ৯আমীরে ফায়সাল ঢাকার কাকরাইলের জিম্মাদার (দায়িত্বশীল) মাওলানা মোশাররফ হোসাইন, মুফতি মাওলানা নুরুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন জিম্মাদার (দায়িত্বশীল) দিনাজপুরের ইজমেতায় আসবেন। এছাড়া মালয়েশিয়ার ১টি জামাত, ইন্দোনেশিয়ার১টি, মালয়েশিয়া ইনাতোনেশিয়া মিলে ১টি ও ভারতের ২টি এরই মধ্যে দিনাজপুরে এসে পৌঁছেছেন। তিনি জানান, এই মেহমানগন ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সামনে বয়ান পেশ করবেন। এছাড়া বধিরদের জন্য আলাদা একটি জামাত রয়েছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে ৩ দিনব্যাপী এই ইজতেমা শেষ হবে। এই ইজতেমায় তাওহীদ রিসালাত ও আখেরাত নিয়েই মূলত বয়ান (আলোচনা) করা হবে।
দিনাজপুরের প্রবীন আরেক জিম্মাদার আলহাজ্ব মোঃ মেহেরুল ইসলাম আরো জানান, মানুষকে দ্বীনের পথে উদ্বুদ্ধ করতে, আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীর দিকে রুজু করতে, কিভাবে মানুষকে আখেরাতমূখী করা যায়, আখেরাতের জিন্দেগী বা মৃত্যুর পরবর্তি জীবন কেমন হবে, মানুষের মাঝে হক তথা সঠিক পথ কবুল করার যোগ্যতা তৈরী এসব বিষয়ে এই ইজতেমায় বয়ান (আলোচনা) করবেন তাবলীগ জামাতের মুরব্বিরা।
এদিকে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য এরই মধ্যে অজু-গোসলের পানি সরবরাহের জন্য ২০টি টিউবওয়েল, একটি সাবমারসেবল পাম্প, ৩টি মটর স্থাপন করা হয়েছে। লাইটিংয়ের জন্য বৈদ্যুতিক জেনারেটর বসানো হয়েছে। এছাড়া নিরাপদ স্যানিটেশনের জন্য শতাধিক টয়লেট তৈরা করা হয়েছে। বিদেশী মেহনান ও তাবলীগ জামাতের বৃদ্ধ সাথীদের জন্য মাঠের দক্ষিণ পাশে খাস কামরা (বিশেষ কক্ষ) তৈরী করা হয়েছে। এই খাস কামরায় আগত বিদেশী মেহমান ও তাবলীগ জামাতের বৃদ্ধ সাথীরা থাকবেন বলে তাবলীগ জামাতের জিম্মাদাররা (দায়িত্বশীল) জানিয়েছেন।
ইজতেমায় প্যান্ডেল তৈরী, টয়লেট নির্মাণ, নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য টিউবওয়েল স্থাপন, বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা জিম্মাদার (দায়িত্বশীল) নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আর এসব স্থাপনের সব ধরনের খরচ তাবলীগ জামাতের সার্থীরা নিজ উদ্যোগে করেছেন। কারো নিকট থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা নেয়া হয়নি। তবে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি ও সওয়াবের আশায় স্বেচ্ছায় এসব কাজ করেছেন তাবলীগ জামাতের সাথীরা।
এদিকে ইজতেমা উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইজমেতা মাঠে অবস্থানের জন্য আগত মুসল্লিদের জন্য চাটাইসহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে ইজতেমা মাঠের উত্তর পাশে দোকানীরা তাদের দোকান নিয়ে বসবেন। টুপি, তসবিহ, জায়নামাজ, মেছওয়াকসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির জন্য দোকানীরা তাদের দোকান তৈরী করবেন।
দিনাজপুর তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলহাজ্ব মোঃ মেহেরুল ইসলাম ও হাবিপ্রবির শিক্ষক কৃষি রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল হাকিম আমীরে ফায়সাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ১০জন শুরা সদস্য রয়েছেন। মূলত তারাই পুরো দিনাজপুর জেলার তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
উল্লেখ্য, এর আগে তৃতীয়বার ২০২৩ সালের ২ মার্চ ৪ মার্চ পর্যন্ত, দ্বিতীয়বার ২০২২ সালের ৩১ মার্চ হতে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ও প্রথমবার ২০১৭ সালের ৩১ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথমবারের মত দিনাজপুরে ৩দিনব্যাপী তাবলীগ জামাতের জেলা ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।