মোঃ বেল্লাল হোসাইন নাঈম,
স্টাফ রিপোর্টার
নোয়াখালীর কবিরহাটে চিকিৎসক ও হাসপাতাল মালিকের অবহেলায় নবজাতক ও প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকা জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) উপজেলার কবিরহাট বাজারের “জননী জেনারেল হাসপাতাল এন্ড নরমাল ডেলিভারী সেন্টারে” এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম রেহানা আক্তার (৩২)। তিনি উপজেলার নরোত্তম পুর ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের পদুয়া গ্রামের মিয়াজি বাড়ির মো. মজিবুর রহমানের স্ত্রী।
নিহতের স্বামী মজিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রেহানাকে তিনি কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তাররা কোন রকম দেখে প্রায় ৩-৪ ঘন্টা পরে বিকেল ৪টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
তখন আমাদের গ্রামের ডাক্তার বিপুল এর সাথে যোগযোগ করলে তিনি আমাকে বলেন- জননী হাসপাতালে কথা বলে দিয়েছি, তুমি রোগীকে সেখানে নিয়ে যাও।
জননী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তারা হাসপাতালের ভিতরে নেওয়ার পূর্বে রাস্তায় তাকে পরীক্ষা করে দেখে ৩-৫ নার্স ও ওর্য়াডবয়কে দিয়ে টেনে হিছড়ে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যায়।
পরে আমাকে বলে রোগীর আল্ট্রা করতে হবে টাকা দিন। আমি টাকা দেওয়ার পর তারা রোগীকে একটি রুমের ভিতরে নিয়ে যায়। এসময় আমি বাহিরে অপেক্ষা করছিলাম।
প্রায় ২ঘন্টা পরে তারা আমাকে বলে গাড়ী নিয়ে আসেন। তখন আমি একটি সিএনজি নিয়ে আসলে তারা আমাকে বলে- আপনার রোগীকে কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে জানতে পারি আমার স্ত্রী মারা গেছে।
মজিবুর রহমান আরও বলেন, জননী হাসপাতালে ডাক্তাররা আমাকে সেখানে সেময় জিজ্ঞাসা করেছে যে আপনি কোনটা চান? স্ত্রী নাকি শিশু? আমি বলেছি- স্ত্রীকে চাই। অথছ তারা আমার স্ত্রীর কি চিকিৎসা করলো আমি জানিনা, এখন আমার স্ত্রী ও শিশু সন্তান দুজই মারা গেছে। মজিবুর রহমান বলেন, আমি গরীব-অসহায় ও নিরিহ লোক। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এঘটনার বিচার চাই।
বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রেহানাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, জননী জেনারেল হাসপাতাল এন্ড নরমাল ডেলিভারী সেন্টারের কোন অনুমোদন নেই। তারা দাপট দেখিয়ে অপ-চিকিৎসা দিয়ে মানুষকে হত্যা করছে।
জননী জেনারেল হাসপাতাল এন্ড নরমাল ডেলিভারী সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে প্রথমে বলেন-রোগীকে হাসপাতালের ভিতরে আনা হয়নি ! পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বলে, রোগীকে হাসপাতালের ভিতরে আনার পরপরই রোগী মারা গেছে ! এখানে আমাদের গাফিলতি নেই।
এসময় ওই হাসপাতালে চেম্বার করেছিলেন ডাক্তার রাফি। এবিষয়ে ডাক্তার রাফি বলেন, রোগীকে আনার পর আল্ট্রা করানো হয়েছে। আল্ট্রায় পেটের নবজাতকের পালস পাওয়া যায়নি। তিনি আল্ট্রা রিপোর্ট দেখেছেন, কিন্তু রোগীকে দেখেননি। সিনিয়র সিস্টাররা রোগীর অবস্থা চেক করেছেন।
কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.শ্যামল কুমার দেবনাথ বলেন, আমাদের এখানে হাসপাতালের ইমারজেন্সীতে একজন প্রসূতিকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মাসুম ইফতেখার বলেন, বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি। এবং অনুমোদন বিহিন ভাবে কেউ হাসপাতাল চালালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শাহীন মিয়া বলেন, এ ঘটনায় নিহতের স্বজনেরা থানায় কোনো অভিযোগ করেনি।