
মোঃ বেল্লাল হোসাইন নাঈম,
স্টাফ রিপোর্টার

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ-শান্ত, কৃষিনির্ভর একটি গ্রামীণ উপজেলা। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতের আঁধারে এই জনপদ কেঁপে উঠল এক নারকীয় হত্যাকাণ্ডে। চন্ডিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম শ্রীরামপুর গ্রামের একটি দুই তলা বাড়িতে মা ও মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সেই সঙ্গে লুট হয়েছে স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালামাল।
নিহতরা হলেন ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের স্ত্রী জুলেখা বেগম (৫৫) ও তার কলেজপড়ুয়া মেয়ে তানহা মীম (২০)। ঘরজুড়ে রক্তের দাগ, এলোমেলো আসবাব, ভয়ে স্তব্ধ গ্রাম-সব মিলিয়ে যেন এক ভয়ঙ্কর দৃশ্যপট।
সেদিন সন্ধ্যায় বাবা ও ছেলে দোকানে ছিলেন। বাড়িতে ছিলেন মা-মেয়ে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফরহাদ হোসেন রাব্বী, নিহত জুলেখার ছেলে, যখন দোকান থেকে বাড়ি ফেরেন, তখনো তিনি ভাবেননি এমন কিছু ঘটতে পারে। কিন্তু বাড়ির গেট খোলা দেখে মনে সন্দেহ জাগে। ঘরে ঢুকেই দেখতে পান তছনছ অবস্থা। মায়ের নাম ধরে ডাকতে থাকেন-কিন্তু কোনো সাড়া নেই। দোতলার পূর্ব পাশের রুমে গিয়ে দেখেন, রক্তে ভেজা মেঝেতে মা ও বোন নিথর পড়ে আছেন।
চোখের সামনে সবকিছু ভেঙে পড়ে রাব্বীর। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
আমি ডাকাডাকি করেও সাড়া পাইনি। রুমে গিয়ে দেখি মা আর বোন রক্তে ভেসে আছে… বুঝে উঠতে পারিনি, এ কেমন অন্ধকার নেমে এলো আমাদের ঘরে।
নিহতের বড় মেয়ে লাকি আক্তারের স্বামী গোলাম মর্তুজা মামুনের চোখেও আতঙ্ক। তিনি জানান,
শ্যালকের বিয়ের জন্য সম্প্রতি প্রায় ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার কেনা হয়েছিল। হয়তো এই লোভই তাদের জীবন কেড়ে নিলো।
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। স্থানীয়রা ভিড় জমায় বাড়ির সামনে। কেউ কাঁদছে, কেউ স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পুলিশের লাল টেপে ঘেরা ঘরের দিকে।
রামগঞ্জ থানার ওসি মো. আবদুল বারী বলেন,
প্রাথমিকভাবে এটি ডাকাতির ঘটনা মনে হলেও, তদন্ত চলছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী জানান,
মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় তদন্তের সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি পরিকল্পিত হত্যা নাকি লুটের ছক, শিগগিরই স্পষ্ট হবে। জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।
এই দ্বিগুণ হত্যাকাণ্ডে চন্ডিপুরের জনমনে এখন শুধু একটাই প্রশ্ন-মানুষ এত নৃশংস হতে পারে কীভাবে?
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুর রশিদ হঠাৎ বলে ওঠেন,
আমরা তো এমন দৃশ্য কোনোদিন দেখিনি। এ যেন সিনেমার মতো, কিন্তু বাস্তবের ভয়ানক গল্প।
রামগঞ্জের এই মা-মেয়ের হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারের সর্বনাশ নয়, বরং পুরো এলাকার নিরাপত্তা ও মানবিকতার ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন।
রক্তমাখা এই রাতের দুঃস্বপ্ন যেন মনে করিয়ে দেয়- লোভ, প্রতিহিংসা আর নৈতিকতার অবক্ষয়ে মানুষ যখন অমানুষ হয়, তখন কোনো ঘরই আর নিরাপদ থাকে না।


















