
জবি করেসপন্ডেন্ট
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীন বলেন, ‘বিশ্বজিৎ হত্যার দৃশ্যচিত্র আজও দেশের মানুষকে কাঁদায়, এবং আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে দণ্ডহীনতার সংস্কৃতি রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ের জন্য মারাত্মক হুমকি।’

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সাজিদ ভবনের নিচতলায় শিক্ষক সমিতির লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
তিনি আরোও বলেন, ‘২০১২ সালের এই দিনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বর্বরতায় একজন নিরীহ নাগরিককে ভুল পরিচয়ের ভিত্তিতে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই নৃশংস ঘটনা বাংলাদেশের বিবেককে আহত করেছে এবং মানবিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিশ্বজিরে মৃত্যু শুধু একজন মানুষের প্রাণহানি নয়; এটি ছিল মানবতা, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর বর্বর আঘাত।’
অধ্যাপক রইচ উদদীন বলেন, ‘আজকের এ দিনে আমি বিশ্বজিৎকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং ফ্যাসিবাদের পতনে তার আত্মত্যাগকে গভীরভাবে অনুধাবন করছি। আমি বিশ্বাস করি কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ, সংগঠন বা ক্ষমতার ছায়ায় দাঁড়িয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যার ন্যূনতম বৈধতা কারো নেই।’
তিনি আরোও বলেন, ‘বিশ্বজিৎ হত্যার দৃশ্যচিত্র আজও দেশের মানুষকে কাঁদায়, এবং আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে দণ্ডহীনতার সংস্কৃতি রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ের জন্য মারাত্মক হুমকি। আমি গভীর শোকের সঙ্গে স্মরণ করছি, নিহত বিশ্বজিৎ দাসকে, তাঁর শোকাহত পরিবারকে এবং ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রামরত সকল মানবাধিকারকর্মীকে।’
তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, ‘ ন্যায়বিচারের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হলেও সাজাপ্রাপ্তদের দণ্ড বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেন কোনো বিলম্ব বা শিথিলতা না ঘটে; এটি রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের দৃঢ় আহ্বান; রাজনৈতিক সন্ত্রাস ও ছাত্র সংগঠনের সহিংসতা কঠোরভাবে নির্মূল করতে হবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় সন্ত্রাসমুক্ত করা শুধু প্রশাসনের দায়িত্বই নয় আমাদের সকলকেও এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে; নিরীহ নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। বিশ্বজিৎ দাসের মতো নিরীহ মানুষ যেন কখনো আর রাজনৈতিক সংঘর্ষের বলি না হয় তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও পেশাদার, নিরপেক্ষ ও মানবিক ভূমিকা পালন করতে হবে; বিশ্বজিৎ-এর স্মৃতি সংরক্ষণে স্থায়ী উদ্যোগ প্রয়োজন। ইতিমধ্যে এ মর্মে টোকেন একটি স্মৃতিফলক বা স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরে একটি স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
সংবাদ সম্মেলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইনসহ সমিতির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সাংবাদিক প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, বিশ্বজিৎ দাস-এর হত্যা দিবস স্মরণে জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীন-এর নেতৃত্বে ‘বিশ্বজিৎ চত্বরে’ পুস্পস্তবক অর্পণ করেন এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ছাত্র সংগঠন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


















