
মোঃমোমিনুল ইসলাম স্টাফ রিপোর্টার (দিনাজপুর)
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির আন্ডারগ্রাউন্ডে কয়লা উত্তোলনের ফলে পার্শ্ববর্তী পাতরাপাড়া সহ ১৩ গ্রামে ভয়াবহ ভূমিধস দেখা দিয়েছে। গ্রামের বাড়িঘর, আবাদি জমি ও রাস্তাঘাট প্রতিনিয়ত দেবে যাওয়ায় চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন হাজারো পরিবার। যেকোনো মুহূর্তে সম্পূর্ণ এলাকা খনিগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে গ্রামবাসীদের।

এই সংকটময় পরিস্থিতি তুলে ধরতে এবং প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে আজ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে “বসত বাড়ী রক্ষা কমিটি, পাতরা পাড়া”গ্রামবাসী।
বসতবাড়ি রক্ষা কমিটির সভাপতি
আবুল কালম আজাদ, বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কয়লা উত্তোলনের ফলে খনির পূর্বাংশে অবস্থিত পাথরাপাড়া গ্রাম ধীরে ধীরে দেবে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই গ্রামের প্রায় ১ থেকে ১.৫ ফুট মাটি নিচে চলে গেছে। গভীর রাতে মাটি দেবে যাওয়ার শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। তারা বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে আবাস ভূমি নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত। কখন যে বাড়িঘরসহ সব স্থাপনা তলিয়ে যাবে, এই ভয়ে আমরা ঘুমাতে পারছি না।”
তিনি আরও জানান, গ্রামের পশ্চিমাংশের একটি বড় এলাকা ইতোমধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট দেবে গিয়ে বিশাল জলাশয়ে পরিণত হয়েছে, যা তাদের আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি কর্তৃপক্ষকে বারবার অবগত করা হলেও তারা কোনো স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়নি। অতীতে গ্রামবাসীর আন্দোলনের মুখে কিছু বাড়িতে ফাটলের জন্য নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দিলেও মূল সমস্যা, অর্থাৎ ভূমিধস রোধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কমিটির অভিযোগ, খনির মাইনিং জিএম বারবার আশ্বাস দিয়েও এলাকাবাসীকে ধোঁকা দিচ্ছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে তারা জানান।
এই পরিস্থিতিতে দেশবাসী ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং সমস্যার স্থায়ী সমাধানে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চারটি সুনির্দিষ্ট দাবি উত্থাপন করেছে বসত বাড়ী রক্ষা কমিটি।
গ্রাম বাসি জনি বলেন, ভূমিধস ও বাড়িঘরের ফাটলের কারণে সৃষ্টদির স্থায়ী সমাধান এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জন্য নতুন ও টেকসই পাকা রাস্তা নির্মাণ করা। এলাকায় নিরাপদ ও সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বেকার যুবকদের খনিতে চাকরির ব্যবস্থা করা।
গ্রাম বাসি আবজাল জানান,আমরা আর প্রতিশ্রুতি বা আশ্বাস চাই না, আমরা এর কার্যকর বাস্তবায়ন চাই। আমাদের জীবন ও সম্পদ নিয়ে আর কোনো অবহেলা আমরা সহ্য করব না। যদি আমাদের এই ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে আমরা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। তিনি আর জানান,মাননীয় উপদেষ্টা , বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন জানাই—আমাদের বাঁচান। আমাদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার আগে, আমাদের স্বপ্নগুলো ধুলোয় মিশে যাওয়ার আগে, দয়া করে আমাদের রক্ষা করুন।
শহিদুল বলেন, ইজাজিল বক্তব্য বলেন, বাড়িতে ফাটল ও দেবে যাওয়া আমাদের প্রতিটি বাড়ির দেয়ালে, মেঝেতে এবং ছাদে মারাত্মক ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক বাড়িঘর দেবে গেছে বা একপাশে হেলে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে একটি বড় ধরনের ধসের আশঙ্কায় আমাদের প্রতিটি রাত কাটে নির্ঘুম।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। কিন্তু এই উন্নয়নের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছি আমরা, খনি এলাকার সবচেয়ে কাছের গ্রামের সাধারণ মানুষ। খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট ভূগর্ভস্থ শূন্যতার কারণে আমাদের গ্রাম পাথরাপাড়ায় ভয়াবহ ভূমিধস বা ভূমি অবনমন শুরু হয়েছে। আমাদের চোখের সামনে আমাদের স্বপ্নগুলো মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে।
কমিটির পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনের পর তাদের এই চার দফা দাবি মেনে না নেওয়া হলে আগামীতে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
এদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু তৈয়ব ফারাজি বলেছেন, মাটি দেবে যাওয়ার বিষয়টি পেট্রো বাংলা কে জানানো হয়েছে। একই সাথে ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণ করার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। পেট্রো বাংলা ক্ষতিপূরণ দিলেই ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পাবে বলে জানান।

















